শিশুর রেশন কার্ড: কেন্দ্রের ৬ বছরের প্রস্তাবে রাজ্যের আপত্তি

শিশুর রেশন কার্ড: কেন্দ্র সরকারের নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের রেশন কার্ড না দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। আসুন, পুরো বিষয়টি সহজ ভাষায় বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

শিশুর রেশন কার্ড: কেন্দ্রের নতুন প্রস্তাব কী?

শিশুর রেশন কার্ড

কেন্দ্র সরকার ‘টিপিডিএস কন্ট্রোল অর্ডার ২০১৫’ (TPDS Control Order 2015) সংশোধন করে প্রস্তাব দিয়েছে যে, শিশুদের ৬ বছর বয়স না হলে তাদের জন্য রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে না। এর মানে হলো, ৬ বছরের আগে শিশুদের জন্য রেশনের খাদ্যশস্য পাওয়া যাবে না।

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জানিয়েছে, শিশুদের ৬ বছর বয়স হওয়ার অপেক্ষা করা উচিত নয়। বরং শিশু জন্মানোর পর এক বছর বয়স পূর্ণ হলেই তার নামে রেশন কার্ড ইস্যু করা উচিত। রাজ্য খাদ্যদপ্তরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রককে এই মতামত জানানো হয়েছে।

রাজ্যের প্রস্তাব

  • শিশুর বয়স ১ বছর পূর্ণ হলেই রেশন কার্ড দেওয়া হবে।
  • জন্ম সনদের ভিত্তিতেই রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে।
  • কোনওভাবেই বাংলার মানুষকে খাদ্যশস্য থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংযোগ নিয়ে মতবিরোধ

কেন্দ্রের আরেকটি প্রস্তাব ছিল নতুন রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, তারা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না। রাজ্যের বক্তব্য, কেন্দ্র চাইলে ‘ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’ (NPCI) থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, তবে রাজ্য এতে কোনো ভূমিকা নেবে না।

রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য

পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমরা ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT)-এর বিপক্ষে। রাজ্য সরকারের নীতি হলো ‘সকলের জন্য খাদ্য’। শিশুর জন্মের পরই জন্ম সনদের ভিত্তিতে রেশন কার্ড হওয়া উচিত। কেন্দ্র সরকার চাইলে তাদের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিক, কিন্তু আমরা রাজ্যের মানুষকে খাদ্য থেকে বঞ্চিত করতে দেব না।”

উপসংহার

কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে এই মতবিরোধ সাধারণ মানুষের খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার চায়, শিশুদের জন্মের পরই রেশন কার্ড দেওয়া হোক, যাতে তারা ছোটবেলা থেকেই খাদ্য সহায়তা পায়। অন্যদিকে, কেন্দ্রের প্রস্তাব অনুযায়ী ৬ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত এই বিতর্ক কোন দিকে গড়ায়, তা দেখার বিষয়। তবে রাজ্য সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলার মানুষ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে না।

Leave a Comment